মাধ্যমিক শিক্ষা

প্রশ্নঃ সমাজ ও সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিন।
উত্তরঃ সমাজঃ সমাজ মূলত একটি সংগঠন।সমাজ গঠিত হয় ব্যক্তি এবং গোষ্ঠির সমন্বয়ে। সমাজের পরিধি হয় ক্ষুদ্র থেকে বিশ্বজনীন। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষকে বসবাস করতে হলে প্রচলিত আচরন বিধি এবং কতিপয় মৌলিক প্রত্যয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে বসবাস করতে হয়। তবে মানুষের যেকোন সংঘবদ্ধতাকে সমাজ বলা যায় না। সমাজ হচ্ছে পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত মানব সমষ্টি, যে মানব সমষ্টি তাদের সম্পর্ক সম্পর্কে সচেতন। সাধারন অর্থে একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষে কতিপয় জনসমষ্টির সংঘবদ্ধ জীবনকেই সমাজ বলা হয়।
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন “সামাজিক সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ রূপই হলো সমাজ” আবার এরিস্টটল বলেছেন, “মানুষ সামাজিক জীব”, সমাজবিহীন মানুষ হয় দেবতা, না হয় পশু। সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষ সমাজে বাস করে আসছে। সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংঘ ও প্রতিষ্ঠান।
সংস্কৃতিঃ Culture শব্দের প্রতিশব্দ হলো সংস্কৃতি। সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবন পদ্ধতি (Culture is the way of life)। কোন সমাজের সংস্কৃতি বলতে ঐ সমাজের প্রচলিত জীবন প্রণালীকে বুঝানো হয়।
সমাজবিজ্ঞানী ম্যালিনস্কি সমাজ সম্পর্কে বলেন, “মানুষের তৈরি বস্তু ও একটি উপায় যার মাধ্যমে সে উদ্দেশ্য সাধন করে”। আবার সমাজবিজ্ঞানী টেইলরের মতে “সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত আচার, আচরন, ব্যবহার জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি-প্রথা, আইন ইত্যাদির সমাবেসই হলো সংস্কৃতি।
সংস্কৃতির বিভিন্ন সংজ্ঞা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সংস্কৃতি বলতে কেবলমাত্র মার্জিত রুচি, ব্যবহার বা অভ্যাসের উৎকর্ষতাকে বুঝায় না বরং সংস্কৃতি তা থেকে অনেক বেশি কিছু নির্দেশ করে। কেননা সংস্কৃতি হলো মানুষের সামগ্রিক আচরণের সমষ্টি।

প্রশ্নঃ সামাজিকিকরনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
উত্তরঃ সামাজিকিকরন বলতে সেই প্রক্রিয়াকে বুঝায়, যাতে মানব শিশু পুরোপুরি ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ ব্যক্তি তার সমাজের আচার-আচরন, রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন, আচরন-বিধি এবং সংস্কৃতি-সভ্যতা ইত্যাদির সাথে পরিচিত হয়; সেগুলো তাকে সমাজের একজন ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ রূপে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সুতরাং সামাজিকিকরন শিশুর জীবন চলার পথে অতীব গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। শিশুর সামাজিকিকরনের গুরুত্বের কিছু দিক নিচে তুলে ধরা হলো-

  • প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। শিক্ষার্থীকে এই নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। সামাজিকিকরনের ফলেই শিশু পরিবার, বিদ্যালয়, ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এসব নিয়ম কানুন শিখতে পারে।
  • সামাজিকিকরনের ফলে শিশুদের মধ্যে একটি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
  • আমাদের বিভিন্নমুখী সমস্যা আছে; যেমন- নিরক্ষরতা, জনসংখ্যা সমস্যা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ইত্যাদি। এসব সমস্যা কিভাবে সমাধান করতে হবে সামাজিকিকরনের মাধ্যমেই শিশুরা তা শিখতে পারে।
  • সামাজিকিকরনের মাধ্যমেই শিশুরা সহযোগিতা, স্বার্থত্যাগ, শৃঙ্খলা রক্ষা করা ইত্যাদি গুনাবলি অর্জন করে থাকে।
  • সামাজিকিকরনের মাধ্যমেই শিশুরা একাত্মবোধ হতে শেখে।
  • সামাজিকিকরনের মাধ্যমেই শিশুদের নিজেদের মধ্যে এবং অন্যান্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
  • সামাজিকিকরনের মাধ্যমেই শিশুদের মধ্যে এক ধরনের মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়।

No comments:

Post a Comment