উত্তরঃ বিশ্বাস- বিশ্বাস শব্দটির অর্থ অনেক গভীর। বিশ্বাস মানুষের মনের একটি বিমূর্ত ভাবনা। অর্থাৎ বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হলো মন। কোন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা বা ধারনাকে কেন্দ্র করে মানুষের বিশ্বাস গড়ে উঠে। মানুষের ধর্মীয় অনুশাসন এবং মূল্যবোধও এই বিশ্বাস কেন্দ্রিক। বিশ্বাস মানুষের জীবনাচরনে ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্বাসের সাথে মানুষ আধ্যাতিক চেতনা ও যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিও জড়িত। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের নিজপেশা ও শিক্ষাদানের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রতি তাঁর গভীর বিশ্বাসই তাকে একজন দক্ষ ও আদর্শ শিক্ষক হিসাবে গড়ে তোলার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভ ও আদর্শ জীবন গঠনে বিশ্বাস এক গভীর মূলমন্ত্র হিসাবে কাজ করে।
আমাদের জীবনকে যা গুরুত্ব প্রদান করে, মূল্যবান করে তোলে তাই এক কথায় বিশ্বাস। এই বিশ্বাস আমাদের কর্মে প্রতিফলিত হয়।বিশ্বাস নানা ধরনের হতে পারে। ঐতিহ্যগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মিয় ইত্যাদি। প্রকৃত ঘটনার সাথে বিশ্বাসের সর্ম্পক থাকুক বা না থাকুক তবুও মানুষ অন্ধভাবে সেটাকে আকঁড়ে ধরে থাকে।
মূল্যবোধঃ বিশ্বাসের ভিত্তির উপর গড়ে উঠে মূল্যবোধের কাঠামো। মানুষ তার বিশ্বাসের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করে। জীবনের প্রতিটি স্তরে বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে মূল্যবোধকে প্রয়োগ করে। যেমন একজন ব্যক্তি মানবিকতায় বিশ্বাসী। তিনি জীবজগতের প্রতি সবসময় সহানুভূতিশীল। এখানে তার বিশ্বাস তাকে মানবিক আচরন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে কারনে তিনি মানবিক আচরনকে গুরুত্ব দেন বা মূল্য দেন। এটাই তার মূল্যবোধ। মূল্যবোধ ব্যক্তির শক্তি বা ক্ষমতা যার গুনে সে নিজের বৈশিষ্টকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং যা সে চায় তাই অন্যের মধ্যে বিকশিত করতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যবোধের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। বিষয়বস্তু, শিক্ষকের গুনাবলী, শিখন পরিবেশ এসব উপাদান শিক্ষার্থীর বিশ্বাস গঠনে প্রভাব বিস্তার করে। বিদ্যালয়ে যে বিশ্বাস সে অর্জন করব, তার উপর তার মূল্যবোধ গড়ে উঠবে। যে ব্যক্তি ইতিবাচক বা কল্যানকর গুনাবলীকে মূল্য দেন তিনি শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। কারন তার মূল্যবোধ ও দর্শন দ্বারা তিনি শিক্ষার্থীদের প্রভাবান্বিত করতে পারেন।
মূল্যবোধ জাতীয়দর্শন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করার নীতিমালা বা সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক শক্তি। আধুনিক ধারনা অনুযায়ী মূল্যবোধ হলো কতগুলো জৈব মানসিক সংগঠনের এমন এক সমন্বয় যা পরিবেশের বহু অংশকে সক্রিয়তার দিক থেকে সমগুন সম্পন্ন করে তোলে এবং ব্যক্তির মধ্যে উপযুক্ত আচরন সৃষ্টি করে। এ ধারনাটিকে বিশ্লেষন করলে দেখা যায় পরিবেশ ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের জৈব মানসিক প্রবনতা যা সাধারন ধর্মী ও সামন্ঞ্জস্য পূর্ন আচরন সৃষ্টি করে তাকে মূল্যবোধ বলা হয়।
No comments:
Post a Comment